নিউজডেস্কঃ
বালুক্ষয় থেকে সৈকত রক্ষায় দেশে প্রথমবারের মত ব্যবহৃত হচ্ছে ওভেন জিওটিউব। পরীক্ষামূলকভাবে বসানো হচ্ছে ভাংগন কবলিত সাগরকন্যা কুয়াকাটা সৈকতের দেড় কিলোমিটার এলাকায়। তিন কোটি ৬০লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য প্রকল্পটি বাস্তায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এটি বাস্তবায়িত হলে বর্ষা মৌসুমে বালুক্ষয় থেকে রক্ষা পেতে পারে সৈকতটি এমনটাই মনে করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে আমাবশ্যা-পূর্নিমার জো’র প্রভাবে বালুক্ষয়ে ধ্বংস হচ্ছে সাগরকন্যা নামে খ্যাত পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা। এরফলে গত কয়েক বছরের তুলনায় আঠার কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ সৈকতটির প্রস্থ জিরো পয়েন্টের কাছাকাছি এসে পৌছেছে। পর্যটকসহ স্থানীয়দের বিভিন্ন দাবী ও আন্দোলন সংগ্রামে প্রতিবছর নামকায়স্তে সৈকত রক্ষার অস্থায়ী চেষ্টা করা হয়। কিন্তু জোয়ারের তীব্রতায় তা মেলান হয়ে যায়। সেদিক মাথায় রেখে বিদেশ থেকে আমদানীকৃত এই জিওটিউব বসানো হচ্ছে সৈকতে।
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহি প্রকৌশলী রাশেদুল রহমান জানান, সৈকতের মুল পয়েন্টের দুইপাশে দেড় কিলোমিটার এলাকায় বসানো হচ্ছে ওভেন আর নন ওভেন জিওটিউবগুলো। গত ফেব্রæয়ারী মাসে শুরু হওয়া সাড়ে তিন কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে আগামী জুন মাসে। ইতিমধ্যে কাজ প্রায় শেষের পথে। তিনি জানান, জিও টিউবের মধ্যে এক কিলোমিটার সাদা রংয়ের বা নন-ওভেন জিও টিউব (যেগুলো দেশীয় তৈরি) এবং বাকি ৫০০ মিটার বা আধা কিলোমিটারে কালো রঙয়ের ওভেন জিও টিউব (যেগুলো বিদেশী তৈরি) বসানো হচ্ছে। নন-ওভেন টিউবের চেয়ে ওভেন টিউব বেশি টেকসই হওয়ায় বালুক্ষয় থেকে সহজেই রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তিনি আরো জানান, ‘জিও-টিউবের বাইরে এবং ভেতর দিকে জিও ব্যাগ স্থাপন করায় এবারের প্রতিরক্ষা বাঁধটি আগের চেয়ে টেকসই হবে এবং সৈকত রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।’
স¤প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকায় ১০ থেকে ১৫ জন শ্রমিক নন ওভেন জিও-টিউব স্থাপনের কাজ করছেন। কাজে ব্যস্ত শ্রমিক রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে জানান, ‘ভাডার সময়ে কাম করতে সুবিধা অয়। কিন্তু যহন জোয়ার আয় তহন লবনপানি ঢুইকা কামে সমস্যা অয়। মুহুর্তের মধ্যে বস্তার (নন ওভেন জিও টিউবের) উপরে বালু জমা অইয়া শক্ত অইয়া যায়। পরে হেগুলো আরেকখানে নেওয়া যায় না’। সরেজমিনে দেখা যায়, ভাটার সময়ে শ্রমিকরা অনরবত কাজ করতে পারলেও জোয়ারের সময় ঢেউয়ের ঝাপটায় তারা কাজ করা থেকে বিরত থাকে।
পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ড এর তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ মজিবুর রহমান নিউজবাংলাকে জানান, বালুক্ষয় থেকে কুয়াকাটা সৈকতকে রক্ষায় এই পদ্ধতিটি একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা। এখানে একটি স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজের জন্য ডিপিপি বা খসড়া প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলমান আছে। সেটি চূড়ান্ত হলে সে অনুযায়ী এখানে স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ তৈরি করা হবে।’
তিনি জানান, গত বছর যে জিওটিউব বসানো হয়েছিল সেগুলো স্থানীয় লোকজন কিংবা পর্যটকরা নষ্ট করেছিল। কিন্তু ওভেন জিওটিউব এতই শক্ত ও মজবুত যে এগুলো যেকেউ ইচ্ছা করলেই নষ্ট করতে পারবেনা। কারণ এগুলে কাটা ছেড়া সম্ভব না।
তবে কাজের মান নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে রয়েছে নানা প্রতিক্রিয়া। টুরিষ্ট ব্যবসায়ী রাজু আহমেদ নিউজবাংলাকে জানান, ‘গতবারের চাইতে এবারের টিউবগুলো দ্যাখতে ভাল মনে হয়। কিন্তু এসব টিউবে যদি লাল এবং মোটা বালু দিত তাহলে আরো ভাল হইত’। এসব টিউবে স্থানীয় লোকাল বালু দেয়ায় স্থায়ীত্ব নিয়ে আশংকা প্রকাশ করছেন তিনি। তার সাথে এক মত পোষন করেন স্থানীয় আরো অনেকে।
এব্যপারে কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব শরীফ নিউজবাংলাকে জানান, ভাঙনের কবল থেকে সৈকতটি স্থায়ীভাবে রক্ষা করতে না পারলে পর্যটকরা এখানে ভ্রমণের আগ্রহ হারাবেন। পাশাপাশি উদ্যোক্তারাও কুয়াকাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। তাই যেভাবেই হোক সৈকতটিকে স্থায়ীভাবে রক্ষা করার দাবী জানাই। তিনি বলেন, শুনিছি গত বছরের চেয়ে এবারের ব্যাগগুলো নাকি খুব মজবুত। যদি তাই হয় তাহলে পানিউন্নয়ন বোর্ডসহ পৌরমেয়রের উচিত এগুলো রক্ষনাবেক্ষন করা।
স্থানীয়দের বিরুদ্ধে দেশী জিওটিউব কেটে ফেলার গুরুতর অভিযোগও করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার স্বপন মৃধা। নিউজবাংলাকে তিনি জানান, ‘স্থানীয় খুটা জাল ব্যবহারকারী কিংবা সৈকতে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালকরা পরিকল্পিতভাবে দেশীয় তৈরি নন ওভেন জিওটিউবগুলো গতবছরের ন্যায় এবারও কেটে নষ্ট করে ফেলছে। ফলে সেগুলো জোয়ারের পানির সাথে মিশে যাচ্ছে’। সরকারী সম্পত্তি এভাবে নষ্ট না করার আহবানও জানান তিনি।
তবে লকডাউন থাকায় এব্যাপারে স্থানীয় জেলে আর মোটরসাইকেল চালকদের কারও সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আর কেউ যাতে এগুলো নষ্ট করতে না পারে সে ব্যপারে কড়া নজরদারীর আশ^াস কুয়াকাটা পৌরসভা মেয়রের। মেয়র মোঃ আনোয়ার হাওলাদার নিউজবাংলাকে জানান, ‘প্রয়োজনে দিনে রাতে পাহারার ব্যবস্থা করা হবে তারপরেও সরকারী এই সম্পত্তি আর কাউকে নষ্ট করতে দেয়া হবেনা’। পাশাপাশি তিনি এই প্রকল্পের পাশেই আরো একটি প্রকল্প চালুর দাবী জানান। তাহলে সাগরের উত্তাল ঢেউ থেকে গোটা পয়েন্টটা বর্ষা মৌসুমে বালুক্ষয় থেকে পুরোপুরি রক্ষা করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালেও এক কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে একই স্থানে দেশীয় তৈরি জিও-টিউব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই সেটি সাগরে বিলীন হয়ে যায়। এরজন্য পানিউন্নয়ন বোর্ড স্থানীয়দের দায়ী করছেন।
