নিউজডেস্কঃ
পাহাড়ি এলাকার হনুমানের দেখা মিলল এবার দক্ষিনাঞ্চলে। গত তিনদিন ধরে পটুয়াখালীর একটি স্কুল, স্কুল সংলগ্ন বাজার এবং লোকালয়ের মধ্যেই এই হনুমানটি ঘুরে বেড়াচ্ছে। হনুমানটিকে এক নজরে দেখতে প্রতিদিন স্থানীয় লোকজন ছুটাছুটি করছে। তবে কেউ এর ক্ষতি করেনা। সবাই খাবার দিচ্ছে এবং হনুমানটি তা গ্রহণও করছে।
তবে এটিকে মুখপোড়া হনুমান বলা হয় বলে নিশ্চিত করেছেন পটুয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, লোকমুখে খবর শুনে এটি পর্যবেক্ষনের জন্য ঘটনাস্থলে লোক পাঠিয়েছি। স্থানীয়দের মাধ্যমে যতটুকু জেনেছেন তাতে তিনি মনে করেন, এটির আবাসস্থল পার্বত্য এলাকায়। অর্থাৎ বান্দরবন এলাকায় এসব হনুমানের একক আধিপাত্ত। দক্ষিনাঞ্চলে এরকম হনুমান দেখা যায়না। সুন্দরবনে কিছু থাকলেও সেগুলো মুখপোড়া হনুমান না। তিনি বলেন, মুখমন্ডল আগুনে পোড়ার মত হওয়ায় একে সাধারণত পোড়া হনুমান বলে থাকে স্থানীয়রা। তাছাড়া এগুলো পাচারকালে কিংবা খেলা করার জন্য অনেকে এনে থাকে। তার ধারনা, পাচারকালে এগুলো ছুটে গেছে। যেকারণে খাবারের সন্ধানে প্রানীটি লোকালয়ে ঢুকে পরেছে।
এদিকে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার কাঠালতলী মাধবখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় হনুমানটি ছুটে বেড়াতে দেখা গেছে। সোমবার কাঠালতলী সাপ্তাহিক বাজারেও এটিকে দেখা গেছে। হনুমান দেখতে স্থানীয় উৎসুক জনতা ও শিশুরা ভিড় করছে। খুবই শান্ত প্রকৃতির হনুমানটি কারও কোনো ধরনের ক্ষতি করছে না। পেটের ক্ষুধায় ভয়ভীতি ছেড়ে সে লোকালয়ে এসেছে বলে অনেকে ধারণা করছেন। তাকে অনেকেই হাত বাড়িয়ে কলা, বিস্কুট, পাউরুটি দিচ্ছেন। লোকজনের আনাগোনা বেশি হলে বিরক্ত হয়ে সেখান থেকে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। হনুমানটি কোথা থেকে কীভাবে এসেছে তা কেউ সঠিকভাবে বলতে পারছে না।
সুবিদখালী বাজারের টমটম চালক সমির হোসেন বলেন, কয়েক দিন ধরে হনুমানটি এই এলাকায় দেখা যায় বলে শোনা গেছে। যেকারণে প্রথমবার সরাসরি হনুমান দেখতে আসলাম এবং দেখলামও। হনুমানকে যে যা দিচ্ছে তাই খাচ্ছে, উৎসুক লোকজন ও শিশুরা তাকে বিরক্ত করছে। ভালই লাগছে।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কাঠালতলী হাই স্কুলের শিক্ষক মোঃ আবদুল গাফ্ফার জানান, আগে কখনও এসব এলাকায় হনুমান দেখা যায় নাই। এটিই প্রথম। প্রথম দিকে দূর থেকে অনেকে এটিকে বানর মনে করছিল কিন্তু কাছে আসলে বোজা গেছে অনেক বড় আকারের হনুমান। তিনি জানান, রাতে শত্রæদের হাত থেকে রক্ষার জন্য তার স্কুলের উপরে মোবাইল ফোনের টাওয়ারকে নিরাপদ হিসাবে বেছে নিয়েছে হনুমানটি। এছাড়া দিনে তার স্কুলের বিভিন্œ ছাদে ছুটাছুটি করে। আজকেও সারাদিন ছুটা ছুটি করছে তার স্কুলের ছাদে। লাফিয়ে লফিলে এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে যায় যা দেখে ছাত্র-ছাত্রীরা আনন্দ পায় এবং নিজ উদ্যোগে সবাই হনুমানটিকে খাবার তুলে দিচ্ছে। তিনি জানান, কোথা থেকে কিভাবে এটি এই লোকালয়ে আসলো সেটি আসলেই ভাবনার বিষয়।
মির্জাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সঞ্জিব কুমার বিশ্বাস বলেন, এসব হনুমান প্রকৃতির বন্ধু। হনুমানকে বিরক্ত না করলে সে কারও ক্ষতি করবে না। খাবারের সন্ধানে হয়তো সুন্দরবন বা দক্ষিণাঞ্চলের কোনো এলাকা থেকে বা ট্রাকের ছাঁদে চড়ে হনুমানটি এখানে আসতে পারে বলে তার ধারনা।
পটুয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন আরো জানান, হনুমানটিকে উদ্ধার করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে বনবিভাগের পক্ষ থেকে। যদি সেটা সম্ভব হয় তাহলে এটিকে বনের মধ্যেই অবমুক্ত করা হবে।
