নিউজডেস্কঃ
ক্লিনিক কাম আশ্রায়কেন্দ্র। যেকোন দূর্যোগে উপকুলবাসী এখানে আশ্রায় নেয় আবার তাদের চিকিৎসার ভরসার স্থানও এটি। সারা বছর এখানে মাত্র ষাট টাকায় মিলছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সেবা। পটুয়াখালীর নয়ামিশ্রিপাড়ার এ ক্লিনিক থেকে গত এক বছরে ১২হাজার মানুষ চিকিৎসা সেবা গ্রহন করে সুস্থ্য হয়েছেন।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঝড় জ¦লোচ্ছাস কিংবা যেকোন দূর্যোগ থেকে উপকুলবাসীকে রক্ষার জন্য ২০১৮ সালে এই আশ্রায়কেন্দ্রটি নির্মান করে লুক্সেমবার্গ সরকার। তখন এর নাম ছিল ফ্রেন্ডশীপ আশ্রায়কেন্দ্র। পরেওই ভবনেই বেসরকারীভাবে গড়ে তোলা হয় একইনামে অর্থাৎ ফ্রেন্ডশীপ ক্লিনিক নামের একটি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র। যেটি এই চরাঞ্চলের বাসিন্ধাদের কাছে এখন আশির্বাদ। উপজেলা বা জেলা শহরে চিকিৎসা নিতে সময় ও খরচ বেশি হওয়ায় বিকল্প হিসাবে এখানে চিকিৎসা সেবায় স্থানীয়দের আগ্রহ বেশি। কম মূল্যে ভাল সেবা পেয়ে সবাই খুশী। তাই সবাই ছুটছে এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে।
কথা হয় এখানে চিকিৎসা নিতে আসা ৫৫বছরের মোসাম্মদ হালিমা বিবির সাথে। তিনি জানান, দুই বার আইছি এ্যাহানে চোহের ডাক্তার দেহাইতে। মুই নিজে ভাল অইছি হ্যারপর বুইনেরে লইয়াইছি চউখ পরীক্ষার জন্য। হালিমা বিবি বলেন, এ্যাহানের স্যাররা শহরের গুলোর চাইয়া ভাল। মনখুইল্লা কতা কওয়োন যায়। আবদুল খালেক ও তার স্ত্রী এসেছে তাদের নবজাতককে নিয়ে। হালকায়ে জ¦র জ¦র ভাব তাই। কেন এসেছেন প্রশ্ন করলে তিনি জানান, উপজেলা বা জেলায় যেতে সময় দরকার অনেক আবার টাকাও খরচ হয় তিন থেকে চারশ টাকা। যেকারণে বাড়ী থেকে কাছে এবং সবার কাছে শুনছি এখানে ভাল হয় তাই এখানে আসছি। মোঃ সোলায়মান (৪৫) মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধর্ইরা দাতে যন্ত্রনা কমেনা। গ্রাম্য ডাক্তার দ্যাখাইয়াও কোন লাভ অয়নাই। তাই এ্যাহানে আইছি। এহন পরীক্ষা করামু। তিনি বলেন, বড় বড় মেশিনের উপ্রে হোওয়াইয়া মোর দাত দ্যাখছে। ভাল্লাগতেছে। ওনাগো ব্যবহারও ভালো। রাগঢাক নাই। আর শহরের ডাক্তারগোতো কথা ছোয়ান যায়না। মোসাম্মদ আকলিমা বেগম জানান, গ্যাছে বচ্ছর ঝড়ের রাইতে মোরা এইহানে আইয়া উঠছিলাম। তহনও এইহানের স্যারেরা মোগো অষুধ দিছিল।
ক্লিনিকের ডেন্টাল টেকনোলজিষ্ট অলিপ সিংহ নিউজবাংলাকে জানান, মেডিসিন চক্ষু ও ডেন্টাল এ তিন বিভাগে রোগী দেখা হয়। প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত সেবা দেয়া হয়। এখানকার মেশিনারি সব জাপানির তৈরি এবং অত্যাধুনিক। ধীরে ধীরে এখানে রোগীর সংখ্যা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেণ, এখানকার বিভিন্ন টেষ্ট রিপোর্টের সাথে ঢাকার নামীদামী সরকারী হাসপাতালের রিপোর্টের সাথে মিলে যায়।
ক্লিনিকের চক্ষু টেকনিশিয়ান শাখাওয়াত হোসেন নিউজবাংলাকে জানান, সব ধরনের চিকিৎসা মোটামেটি করা হয়ে থাকে তবে সরকারী সহযোগিতা পেলে বড় ধরনের অপারেশনসহ অন্যান্য সুবিধা চালু করা যেত। তখন দুর্গম এই এলাকার মানুষের আরো সুবিধা হতো। তিনি বলেন, শুধুমাত্র অপারেশন ছাড়া আল্লার রহমতে আমরা সব ধরনের চিকিৎসা স্বল্পমূল্যে দিয়ে থাকি। অসহায় হতদরিদ্রদের কথা চিন্তা করেই যেহেতু এই ক্লিনিকটি করা হয়েছে আমরাও সেদিকে নজর দিয়ে সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
ক্লিনিকের মেডিকেল অফিসার ডাঃ শাহ মোহাম্মদ নাকিব উদ্দিন নিউজবাংলাকে জানান, রোগীদের কাঙ্খিত সেবা দিতে পেরে তিনি খুশি। সেবার মান ও পরিধি বাড়ানোর চেষ্টার কথাও বলেন তিনি। তিনি জানান, উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে এই অজপাড়াগায়ে থেকে উপকুলের মানুষদের সেবা করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। তিনি জানান, এখানকার মানুষজন খুবই ভাল। একবার সুস্থ্য হয়ে অন্যরোগের জন্য এসে তারা যে পরিমান দোয়া ও উচ্ছাস প্রকাশ করে তখনই মনটা ভাল হয়ে যায়। নাকিব উদ্দিন জানান, দূর দূরন্ত থেকে মানুষদের আসতে যথেষ্ট পরিমান ব্যাগ পোহাতে হচ্ছে ভাঙ্গা রাস্তার কারণে। শুধু মাত্র এই রাস্তাটি যদি মেরামত করা হতে তাহলে রোগিদের চলাচলে সুবিধা হতো। নাকিব জানান, এটি যে শুধু ক্লিনিক তাইনা এখানে যেকোন ঝড় জ¦লোচ্ছাস আসলেই আশপাশের নিচু এলাকার মানুষজন এসে এখানে আশ্রায় নেয়। তখন আমরা তাদেরকে নীচতলা বাদে সব ছেড়ে দেই। এবং প্রাথমিক যে ঔষধ গুলো তখন দরকার হয় তা আমরা ফ্রিতে দিয়ে থাকি।
সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশাপাশি অজোপাড়া গায়ে গড়ে ওঠা এরকম সেবাকেন্দ্রের প্রশংসা করলেন সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ জাহাংগীর আলম শিপন। নিউজবাংলাকে তিনি জানান, বর্তমান সরকার প্রতিটি ইউনিয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক করেছে সেখানেও মানুষ যাচ্ছে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে। পাশাপাশি এরকম বেসরকারীভাবে ক্লিনিক হচ্ছে এই উদ্যোগও ভাল।
সরকারী কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশাপাশি বেসরকারী পর্যায়ে দূর্গম এলাকায় এরকম ক্লিনিক কাম আশ্রায়কেন্দ্র নির্মান অবশ্যই একটি ভাল উদ্যোগ বলে দাবী করেন পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মোঃ মতিউল ইসলাম চৌধুরী। তিনি এই উদ্যোগের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন।
