পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলা সদর ভূমি কার্যালয়ের সহকারী তহশিলদার জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই ‘ঘুষের’ টাকা ফেরত পেতে ভুক্তভোগীরা গতকাল রোববার ভূমি কার্যালয় ঘেরাও করেন। এ সময় কার্যালয়ের সামনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে জাহিদুল মূল গেট বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান করেন। একপর্যায়ে কার্যালয়ের অন্য কর্মকর্তারা ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
এর আগে গত বুধবার রাতে ঘুষের লেনদেনের সময় স্থানীয় সংবাদকর্মীরা ছবি তুলতে গেলে জাহিদুল তাঁদের কাছ থেকে মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন। ওই ঘটনায় সংবাদকর্মী মাহামুদ হাসান থানায় জাহিদুলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
রাঙ্গাবালী সরকারি কলেজের অফিস সহায়ক মো. বেল্লাল হোসেন নামের এক বৃদ্ধ বলেন, জমিসংক্রান্ত ঘটনায় একটি রিপোর্ট দিতে জাহিদুল তাঁর কাছে ৫০ হাজার টাকা চান। তিনি তাঁকে ১৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। এরপর জাহিদুল তাঁর প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বেশি টাকা নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা রিপোর্ট দেন। তাই জাহিদুলের কাছে সেই টাকা ফেরত চাইতে গতকাল তিনি ভূমি অফিসে উপস্থিত হন।
পূর্ব কাউখালী গ্রামের গোলাম রাব্বী বলেন, তিনি বেকু ভাড়া নিয়ে জমির মাটি কাটেন। এ মাটি কাটা বাবদ প্রতি চুক্তিতে জাহিদুলকে পাঁচ হাজার টাকা দিতেন তিনি। এরপর তিনি নিজেই বেকু কিনে মাটি কাটা শুরু করলে, জাহিদুল তাঁর বেকুর চাবি নিয়ে এক লাখ টাকা চান। পরে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে বেকুর চাবি ফেরত পান তিনি। এরপর খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়ার কথা বলে জাহিদুল তাঁর কাছ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিলেও তাঁকে জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি। জমি বন্দোবস্তের নামে দেওয়া টাকা ফেরত পেতে তিনি গতকাল ভূমি অফিসে উপস্থিত হন। কিন্তু লোকজনের উপস্থিতি দেখে জাহিদুল অফিস কক্ষ বন্ধ করে ভেতরে অবস্থান করায় টাকা ফেরত পাননি। পরে ভারপ্রাপ্ত তহশিলদার জাকির হোসেন তাঁর কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ রেখে তাঁকে বিদায় করেন।
ছোট বাইশদা গ্রামের সোহরাব হোসেন বলেন, গত ৭ জুলাই জাহিদুল ও তাঁর কথিত পিএস আল আমিন তাঁর বেকুর চাবি নিয়ে ইউএনওর নাম করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা চান। পরে দুই দফায় তিনি ৫০ হাজার টাকা দিলেও বাকি টাকার জন্য তাঁকে চাবি ফেরত দেওয়া হয়নি। তবে গতকাল ভূমি অফিসের সামনে জনরোষ সৃষ্টি হলে জাহিদুল ভয়ে তাঁর চাবি ফেরত দেন।
পূর্ব বাহেরচরের নজরুল হাওলাদার বলেন, তিনি জমি রেকর্ড করতে গেলে জাহিদুল তাঁর কাছে ৮ হাজার টাকা চান। তিনি সরকারি ফির বাইরে টাকা দিতে আপত্তি জানালে জাহিদুল তাঁর কাগজপত্র বাইরে ছুড়ে মারেন এবং তাঁর জমির দলিল বাতিল করার হুমকি দেন। গতকাল জাহিদুলকে টাকা দেওয়া একাধিক লোকজন অফিসে গেলে তিনিও ভূমি অফিসে যান।
জানতে অভিযুক্ত জাহিদুলের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
রাঙ্গাবালী সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তহশিলদার) মো. জাকির হোসেন বলেন, গতকাল দুপুরে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি তাঁর কার্যালয়ের উপসহকারী ভূমি কর্মকর্তা জাহিদুলের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়াসহ নানা অভিযোগ তুলে হট্টগোল করেন। এ সময় তিনি রাঙ্গাবালী ইউএনওকে বিষয়টি মুঠোফোনে জানান। পরে ইউএনও ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ রাখার নির্দেশ দেন। পরে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করে অভিযোগ রেখে বিদায় করেন তিনি।
ইউএনও রাজীব দাশ পুরকায়স্থ বলেন, ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে সুষ্ঠু তদন্ত করে জাহিদুলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। (প্রথম আলোর সৌজন্যে)
